মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫ - ১০:০৩
অবসেসিভ আচরণ পরামর্শ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়

কিশোরদের মধ্যে অবসেসিভ আচরণ (অতিরিক্ত পুঁজি-আসক্তি) সাধারণত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা এবং অকর্মপরতা বা বেকারত্ব থেকে উদ্ভূত হয়। শুধুমাত্র সতর্কীকরণ বা নৈতিক পরামর্শ দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। এর পরিবর্তে প্রয়োজন শান্ত পরিবেশ, সুশৃঙ্খল দৈনন্দিন কার্যক্রম, বিভিন্ন কার্যকলাপ, এবং মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি’র ধারাবাহিক পারিবারিক বিষয়ক প্রশ্নোত্তর ও পরামর্শের এ পর্বে অবসেসিভ আচরণ বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পরিবার ও বিবাহ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ আলিরেজা তারাশিয়ুন।

প্রশ্ন: “আমার ১৪ বছর বয়সী ছেলে গত সাত–আট মাস ধরে অবসেসিভ আচরণের লক্ষণ দেখাচ্ছে। শুধু হাত ধোয়া বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে নয়, পড়াশোনার পরিকল্পনা পর্যন্ত অত্যন্ত নিয়মমাফিক করে। সে তার সব কাজের তালিকা তৈরি করে, পরে আবার সব কিছুকে নতুনভাবে সাজায় এবং আলমারিতে রাখে। মাঝে মাঝে চলাফেরার সময় হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় এবং কিছু বিষয়ে চিন্তা করে। আমি তাকে বলি ‘এটা করো না’, কিন্তু কোনো ফল হয় না। আমি জানতে চাই, কীভাবে তার সঙ্গে আচরণ করা উচিত?”

উত্তর: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ আলিরেজা তারাশিয়ুন বলেন, “এ ধরনের অবসেসিভ আচরণের সমস্যার সমাধান কেবল কথার মাধ্যমে সম্ভব নয়। যেমন, আপনি কোনো জ্বরগ্রস্ত শিশুকে বসিয়ে বসিয়ে বারবার বলবেন—‘জ্বর ভালো নয়, জ্বর এড়িয়ে চলো!’—যতই সে বুঝুক না কেন, জ্বর শুধু কথার মাধ্যমে চলে যায় না।”

মূলনীতি: সন্তানদের সমস্যায় শুধু নৈতিক পরামর্শ বা সতর্কীকরণ দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়।

অবসেসিভ আচরণের দুটি মূল কারণ:
১. উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ (Anxiety): অধিকাংশ কিশোরে অবসেসিভ আচরণের মূল শিকড় হলো উদ্বেগ। উদ্বিগ্ন অবস্থায় শিশু স্বাভাবিকভাবে অতিমাত্রার চিন্তা বা প্রবণতা প্রদর্শন করতে পারে।

তবে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করতে হলে মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

২. অকর্মপরতা বা বেকারত্ব: উদ্বেগ যখন বেকারত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন অবসেসিভ আচরণ আরও বাড়ে।

অভিভাবকরা প্রায়শই অজান্তে উদ্বেগ সৃষ্টি করেন। উদাহরণস্বরূপ: “পরীক্ষার সময় হয়েছে, পড়াশোনা করতে হবে, অনেক কাজ বাকি আছে!” — এই ধরনের কথা শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত নিস্তেজ থাকা বা ব্যস্ততা না থাকলে শিশুর প্রাকৃতিক মনোযোগ ও সংবেদনশীলতা আরও প্রখর হয়। তাই শিশুকে সক্রিয় ও পরিশ্রমী রাখার ব্যবস্থা করা জরুরি।

কী করা উচিত:
শিশুর জন্য দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিকল্পিত করুন। যেমন, স্কুল বা বাড়িতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় রাখার কার্যক্রম।

তাকে বারবার সতর্ক বা তিরস্কার করা থেকে বিরত থাকুন। অভিভাবকরা বলেন, “আমি বলি, বোঝাই, কিন্তু সে মানে না।” — এই অতিরিক্ত সতর্কীকরণ শিশুর অবসেসিভ আচরণ আরও তীব্র করে।

শান্ত পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল রুটিন তার মানসিক চাপ কমাবে।

সারসংক্ষেপ:
• অবসেসিভ আচরণ কেবল কথার মাধ্যমে বা পরামর্শ দিয়ে ঠিক করা যায় না।
• প্রধান কারণ হলো উদ্বেগ এবং অকর্মপরতা।
• সমাধান হলো শান্ত পরিবেশ, সুশৃঙ্খল কার্যক্রম, শিশুদের সক্রিয় রাখা, এবং মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ।

মনে রাখবেন, বারবার সতর্ক করা বা তিরস্কার শিশুতে অতিমাত্রার চিন্তা বা পুঁজি-আসক্তি আরও গভীরভাবে প্রোথিত করতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha